চা শ্রমিক ডটকমঃ বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার পূর্ব পুরুষদের ধর্ম পরিচয় নিয়ে অনেকে অনেক মিথ্যা অপপ্রচার চালায়।তাদের সহ সকলের জন্য বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার পূর্ব পুরুষদের টুঙ্গিপাড়ায় বসবাস এবং এই বঙ্গদেশে আসার সঠিক কাহিনী নিচে তুলে ধরা হলঃ
বঙ্গে যে কজন সূফি-সাধক ইসলাম প্রচার করেছিলেন, তাঁদের মধ্যে হযরত বায়েজিদ বোস্তামি (রহঃ) অন্যতম।
১৪৬৩ খ্রিস্টাব্দে তিনি উপ-মহাদেশে আগমন করেন এবং চট্টগ্রামে স্থায়ী হন। চট্টগ্রামে তার আস্তানা ও সমাধি বর্তমান। বায়েজিদ বোস্তামি (রহঃ) যখন এ অঞ্চলে ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে আসেন,তখন তাঁর সঙ্গি-শিষ্য ছিলো অনেক। এদের মধ্যে একজন ছিলেন শেখ আউয়াল। তিনি সকলের কাছে দরবেশ শেখ আউয়াল নামে পরিচিতি লাভ করেন। সূফি-সাধক হযরত বায়েজিদ বোস্তামি (রহঃ) ও শেখ আউয়াল (রহঃ) ছিলেন ইরাকের বাসিন্দা।
দরবেশ শেখ আউয়াল (রহঃ) ছিলেন বায়েজিদ বোস্তামি (রহঃ) এর প্রিয় সহচর এবং বিশ্বাসীজন। একদিন বায়েজিদ বোস্তামি (রহঃ) শেখ আউয়াল (রহঃ) কে ডেকে তখনকার বঙ্গের প্রধান এলাকা সোনারগাঁও-এ যাবার নির্দেশ দিলেন। সোনারগাঁও মেঘনা বিধৌত,সুজলা এবং সুফলা। এ অঞ্চলে কখনও ইসলামের প্রচার ব্যাপকভাবে হয়নি। তাকে ইসলামের শান্তির বাণী শোনাতে হবে ঐ এলাকায়। দরবেশ শেখ আউয়াল দু-একজন সঙ্গি নিয়ে এলেন সোনারগাঁও-এ। সোনারগাঁও-এর চারদিকে প্রায় নদী আর খালবিলে ভরা। নদীর পাড়েই এলাকা প্রধানের ঘাঁটি। এখানে বড় বড় নৌকা ও পালতোলা জাহাজ ভরা। সোনারগাঁও-এর প্রকৃতি ভীষন ভালো লাগল দরবেশ শেখ আউয়ালের, এখানেই তিনি আস্তানা গাড়লেন সঙ্গি-সাথিদের নিয়ে।সোনারগাঁও-এ দরবেশ এসেছেন শুনে এলাকার ধর্মপ্রাণ মানুষ ছুটে এলেন তাঁর কাছে। দরবেশ শোনালেন ধর্মের কথা, মানবতার কথা, মানুষের কল্যাণের কথা। চতুর্দিকে শেখ আউয়ালের সুনাম ছড়িয়ে পড়লো। এক সময় তিনি বিয়ে করলেন এক বাঙ্গালি কন্যাকে। ইতিমধ্যে সত্যপথে চলার উপদেশ শুনে অনেকেই তার অনুসারি হলেন। একদিন তার ঘর উজালা করে এক পুত্র সন্তান ভূমিষ্ঠ হলো।বাবা শেখ আউয়াল আদর করে ছেলেটির নাম রাখলেন শেখ জহির উদ্দীন।
দেখতে দেখতে শেখ জহির উদ্দিন বড় হয়ে উঠলেন। বাবার কাছেই ধর্মীয় পড়াশোনা। প্রতিদিন আস্তানায় হাজার হাজর লোক আসে। তারা শেখ আউয়ালকে ভীষন শ্রদ্ধা করেন। এসব দেখে শেখ জহিরের খুব ভালো লাগে। অনেকের কাছে শেখ জহিরও আদরণীয়। শেখ আউয়ালের ধর্মীয় আদর্শ প্রচারের খ্যাতি সোনারগাঁও ছাড়িয়ে বিক্রমপুর পরগনা, ঢাকা এবং সুদূর মানিকগঞ্জ, টাঙ্গাইল ও ভালুকা পর্যন্ত পৌঁছেছে। এ সংবাদ শুনে তাঁর উস্তাদ হযরত বায়েজিদ বোস্তামি (রহঃ) খুশি; কিন্তুু বলা নেই, কওয়া নেই, একদিন সকলকে না জানিয়ে দরবেশ শেখ আউয়াল পাড়ি জমালেন আপনদেশ ইরাকে। যাত্রার প্রাক্কালে শুধু স্ত্রীকে বললেন-আমি হজ্বব্রত পালনে যাচ্ছি। যুবক জহিরকে ডেকে বললেন-মানুষের কল্যাণে থেকো,পরম সৃষ্টিকর্তাকে সব-সময় স্বরণ করো এবং তার আদেশ-নিষেধ মানুষের কাছে প্রচার করো।
এরপর অনেক বছর কেটে গেছে। দরবেশ শেখ আউয়াল আর ফিরে আসেননি বাংলায় তথা সোনারগাঁও-এ। এর পরের ঘটনা প্রায় ২/৩শ’ বছরের! শেখ জহির বাবার আদেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করেন। পরবর্তীকালে শেখ জহিরের ছেলে তেকড়ী শেখও সোনারগাঁওয়ে দাদার নামডাক ঠিকিয়ে রাখেন; কিন্তু দিনবদল ও বাস্তবতার কারণে তেকড়ী শেখ ব্যবসার উদ্দেশ্যে পাড়ি জমান খুলনা। দাদার স্মৃতিধন্য দরবেশের আস্তানাটির দায়িত্ব দিয়ে যান বিশ্বস্তজনের কাছে। খুলনায় তেকড়ী শেখের পুত্র শেখ বোরহান উদ্দিনের জন্ম হয়। বড় হয়ে বোরহানউদ্দিন তার বন্ধুর কাছে শোনেন মধুমতী নদী ও ঘাগোর নদীর মধ্যে জেগে উঠা টুঙ্গিপাড়া নামক একটি অজপাড়াগাঁয়ের কথা। তিনি রুপসা নদী পাড়ি দিয়ে আসেন এ গ্রামে। এ গ্রামের অদূরে পাটগাতী বন্দর। এই বন্দরে মিশেছে ঘাগোর নদী আর পশ্চিমে মধুমতীর ধারা। প্রতিদিন সকালে নদীতে স্নান সেরে জেগে ওঠে টুঙ্গিপাড়া। আর টুঙ্গিপাড়ার প্রকৃতি, সেতো সবুজ – শ্যামলে ছাওয়া। গ্রামের মাঝে ছোট্ট খাল বয়ে চলছে ডিমাডাঙ্গা পর্যন্ত। বছরের ৯ মাসই জলডোবা।গাছগাছালিতে হাজারো পাখি, গ্রামের বাসিন্দারা সাধারণ মানুষ সবাই কৃষিকাজ করেন।খুলনায় কাছের শহর,যাতায়াতের প্রধান বাহন নৌকা এই গ্রামকেই একদিন ভালবেসে ফেললেন দরবেশ শেখ আউয়ালের উত্তরাধিকারী শেখ বোরহান উদ্দীন (রহঃ)। তিনি টুঙ্গিপাড়ায় ঘর বাধঁলেন, বিয়ে করলেন। তার ৩ পুত্র সন্তান জন্ম হলো। এরা হলো শেখ আকরাম, শেখ তাজ ও শেখ কুদরত উল্লাহ্। শেখ আকরামেরও ৩ ছেলে, এদের মধ্যে একজন শেখ আব্দুল হামিদ। শেখ আব্দিল হামিদের এক ছেলের নাম শেখ লুৎফর রহমান, আর এই লুৎফুর রহমানের ৪ কন্যা সন্তান ও ২ পুত্র সন্তানের মধ্যে ১ পুত্র সন্তানের নাম শেখ মুজিব,তিনি শেখ আউয়ালের সপ্তম বংশধর! যিনি বাঙ্গালির হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ সন্তান ও বাঙ্গালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এই হলো বঙ্গবন্ধুর পূর্ব পুরুষদের টুঙ্গিপাড়ায় বসবাস ও বঙ্গে আসার কাহিনী।
Leave a Reply