চা শ্রমিক ডটকমঃ সনাতন ধর্মাবলম্বীদের নিকট পৌষ সংক্রান্তি উৎসবটি খুব গুরুত্বপূর্ণ। এই সংক্রান্তিকে উত্তরায়ণ সংক্রান্তি, কিংবা মকড় সংক্রান্তিও বলা হয়। আমরা সাড়ম্ভরপূর্ণভাবে এই সংক্রান্তি উৎসবটি পালন করি, কিন্তু অনেকেই এর তাত্ত্বিক অর্থ সম্পর্কে অবগত নই। আর কোনকিছুর তাত্ত্বিক অর্থ না জানলে ধীরে ধীরে এর গুরুত্ব হ্রাস পেতে থাকে। এবার চলুন মূল প্রসঙ্গে প্রবেশ করে পৌষ সংক্রান্তির তাত্ত্বিকতা জেনে নিই
প্রতিমাসের শেষ দিন অর্থাৎ যে দিন মাস পূর্ণ হবে সে দিনকে সংক্রান্তি বলা হয়।
সংক্রান্তি অর্থ সঞ্চার বা গমন করা।
সূর্যাদির এক রাশি হতে অন্য রাশিতে সঞ্চার বা গমন
করাকেও সংক্রান্তি বলাযায়।
সংক্রান্তি শব্দটি বিশ্লেষণ করলেও একই অর্থ পাওয়া যায়; সংক্রান্তি, সং অর্থ সঙ সাজা এবং ক্রান্তি অর্থ সংক্রমণ। অর্থাৎ ভিন্ন রূপে সেজে অন্যত্র সংক্রমিত হওয়া বা নুতন সাজে, নুতন রূপে অন্যত্র সঞ্চার হওয়া বা গমন করাকে বুঝায়।
মকড় সংক্রান্তি বলার কারন মকড় একটি রাশির নাম। এই দিনে সূর্যদেব মকড় রাশিতে সংক্রমন করেন। তাই একে মকড় সংক্রান্তি বলা হয়।
মাঘ, ফাল্গুন, চৈত্র, বৈশাখ, জ্যৈষ্ঠ আষাঢ় এই ছয় মাস উত্তরায়ণ কাল। এবং শ্রাবণ, ভাদ্র, আশ্বিন, কার্তিক, অগ্রহায়ণ ও পৌষ এই ছয় মাস দক্ষিণায়ন কাল। পৌষ মাসের শেষ দিনে সূর্য উত্তরায়ণের দিকে যাত্রা শুরু করে বলে এই সংক্রান্তিকে উত্তরায়ণ সংক্রান্তিও বলা হয়।
শাস্ত্রমতে, মানুষের এক বছর দেবতাদের একটি দিন-রাতের সমান অর্থাৎ মানুষের উত্তরায়ণের ছয় মাস দেবতাদের একটি দিন ও দক্ষিণায়নের ছয়মাস দেবতাদের একটি রাত। রাত্রে মানুষ যেমন সকল দরজা-জানালা, প্রধান ফটক ইত্যাদি বন্ধ করে ঘুমিয়ে পড়েন, তেমনি দেবতাগণও রাত্রে অর্থাৎ দক্ষিণায়নে সবকিছু বন্ধ করে ঘুমিয়ে পড়েন। এসময় বাহির থেকে প্রবেশ করার সুযোগ নেই, অর্থাৎ দক্ষিণায়নে দেবলোক পুরোপুরি বন্ধ থাকে। আবার দেবগণের রাত পৌষ সংক্রান্তির দিন শেষ হয় বলে পরবর্তী উদয়ের ব্রাহ্মমুহূর্ত থেকে (গোস্বামী মতে) দেবগণের দিবা শুরু হয়। উক্ত সময়ে স্বর্গবাসী ও দেবলোকের সকলেই নিদ্রা ভঙ্গ হয় এবং নিত্য ভগবৎ সেবা মূলক ক্রিয়াদি শুরু হতে থাকে।
এই জন্য সনাতন ধর্মাবলম্বীগণ ব্রাহ্মমুহূর্তে স্নান, নামযজ্ঞ, গীতাপাঠ, শঙ্খধ্বনি, উলুধ্বনি ও অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দিবসটিকে আনন্দময় করে তোলেন।
Leave a Reply