ক্ষুদ্র নৃ- তাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর বসতবাড়ি আয় উপার্জনকারী জুম, ফলজ ও বনজ গাছ কর্তন
Reporter Name
-
Update Time :
সোমবার, ২৪ মে, ২০২১
-
৬৬২
Time View
বিশেষ প্রতিনিধিঃ মৌলভীবাজার জেলা কুলাউড়া উপজেলার কাঁকড়াছড়া পানপুঞ্জিতে বনজ গাছ কাটার হিড়িক চলেছে। বাংলাদেশ চা বোর্ডের অনুমতি ছাড়াই কাটা রেহানা চা বাগান কর্তৃপক্ষ গাছগুলো কাটছে। এখানে অন্যান্য গাছের মধ্যে বন্যপ্রাণীর খাবার নানা ফলদ গাছও রয়েছে।
পুঞ্জিবাসী বলছেন, হাজারখানেক গাছ কাটা হয়েছে।
কাঁকড়াছড়া পানপুঞ্জিতে পুঞ্জিবাসীদের সঙ্গে মত বিনিময় করছেন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ।
গতকাল রোববার বিকেলে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ পরিদর্শন করে একই কথা বলেছেন।
এ সময় বাপা কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিলের নেতৃত্বে প্রতিনিধিদলে ছিলেন, বাপা হবিগঞ্জ আঞ্চলিক শাখার সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল, বাপা সিলেট আঞ্চলিক শাখার সাধারণ সম্পাদক আব্দুল করিম কিম, বৃহত্তর সিলেট ত্রিপুরা উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি জনক দেববর্মা এবং সম্পাদক সুমন দেববর্মা।
পরিদর্শন মতে, বাপা কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল বলেন, ‘পানজুমে দেখা যায় হাজারখানেক গাছ কাটা হয়েছে। মনে হলো যেন গাছ কাটার হিড়িক চলছে। হাজারের ওপরে বনজ-ফলদ গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়বে।’
পুঞ্জিবাসী অভিযোগ করে বলেন, গত প্রায় সাত থেকে আট বছর ধরে বাগান কর্তৃপক্ষ অন্তত ২০টি ছোট-বড় জুম দখল করে সেখানে চা-চারা রোপণ করছে। এ ছাড়া পুঞ্জি থেকে বের হওয়ার প্রধান রাস্তাটি বন্ধ করে দেয় বাগান কর্তৃপক্ষ। গত দু-তিন বছরে তাদের কবরস্থান দখল করে সেখানেও চায়ের চারা রোপণ করা হয়েছে। বর্তমানে তারা মরদেহ সৎকারের জায়গাও খুঁজে পাচ্ছেন না।
পুঞ্জিতে বসবাসকারী রাবেয়া আক্তার অভিযোগ করে বলেন, ‘রেহানা চা-বাগানের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা বিভিন্ন সময় পুঞ্জির বাসিন্দাদের হুমকি দিচ্ছেন। তারা হুমকি দিয়ে জুমের পান গাছ কেটে ফেলা হবে বলে সাফ জানিয়ে দেয়।’
পুঞ্জির বাসিন্দা গারো সম্প্রদায়ের বিনিতা রেমা জানান, উচ্ছেদের ভয়ে তারা তাদের পুরনো ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান গির্জা ঘরটি সংস্কার করতে পারছেন না। জুম দখলের চেষ্টায় যেকোনো সময় তাদের ওপর হামলা চালানো হতে পারে। সেজন্য তারা রাত জেগে পাহারা দিচ্ছেন।
পুঞ্জির শতবর্ষী বাসিন্দা খাসিয়া সম্প্রদায়ের এডুয়েন মারলিয়া বলেন, ‘এই পুঞ্জিতে আমার জন্ম। এই পুঞ্জিতে অনেক জুম ও পুরনো গাছ ছিল। এখন আর এগুলো নেই। সব দখল করে নিচ্ছে বাগান কর্তৃপক্ষ। অনেকেই এখান থেকে অন্যত্র চলে গেছে। এভাবে চললে তারা পুঞ্জিতে বসবাস করতে পারবে না।’
শতবর্ষী বাসিন্দা এ বিষয়ে প্রশাসনের কাছে সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন।
পুঞ্জির হেডম্যান ( প্রধান) গারো সম্প্রদায়ের জনপল চিছিম বলেন, ‘মাত্র ১৭ পরিবারের বসবাস কাঁকড়াছড়া পুঞ্জিতে। পুঞ্জি ছেড়ে প্রায় ৩০টি পরিবার চলে গেছে। রেহানা চা-বাগান কর্তৃপক্ষ যেভাবে একের পর এক জুম দখল করছে, তাতে আমরা পুঞ্জিবাসী নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছি। তাছাড়া এ রকম ঘটনা প্রশাসনকে জানালে পুঞ্জি থেকে উচ্ছেদের হুমকিও দেওয়া হচ্ছে। অথচ মালিকপক্ষ আমাদের জমিটি লিজ দিয়েছিল। এর কাগজপত্র আছে।’
তিনি জানান, তারা বন্যপ্রাণী খাওয়া বিভিন্ন ফলের গাছও কাটছেন।
রেহানা চা-বাগানের ব্যবস্থাপক একে আজাদ বলেন, ‘পুরো জায়গাটি চা-বাগানের। এখানকার কোনো জায়গা কোনো গোষ্ঠীকে লিজ দেওয়া হয়নি। পুঞ্জিবাসী মিথ্যাচার করছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ বাংলাদেশ চা বোর্ডের নিয়মানুযায়ী প্রতিবছর বাগান এলাকায় চা গাছের চারা রোপণ করে জায়গা বৃদ্ধি করা হয় সামান্য কিছু গাছ কেটে। এখানেও বাগানের জায়গায় সেই নিয়মানুযায়ী চা চারা রোপণ করা হচ্ছে। জুম দখল করা হয়নি।’ গাছ কাটার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ চা বোর্ডের অনুমতি নেওয়া হয়েছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘না অনুমতি নেওয়া হয়নি।’
কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এটিএম ফরহাদ চৌধুরী বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যেন অবনতি না হয় সে বিষয়ে আমি উভয়পক্ষকে বলেছি। সমাধানের চেষ্টা চলছে।’
Please Share This Post in Your Social Media
More News Of This Category
Leave a Reply