চা শ্রমিক মজুরী ৩০০ টাকা দাবী দাওয়াতে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ

স্মরণ সিং (বালিশিরা ভ্যালী)
  • Update Time : শনিবার, ১৩ আগস্ট, ২০২২
  • ৩৯৫ Time View

চা শ্রমিক ডটকমঃ মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলা সাতগাঁও ইউনিয়নের আমরাইলছড়া চা বাগান নাট মন্দির প্রাঙ্গনে আজ ১৩ই আগষ্ট চা শ্রমিকের মজুরী ৩০০ টাকা দাবীতে পূর্ণ দিবস কর্মবিরতি ও দেড় হাজারের অধিক চা শ্রমিকের সমন্বয়ে মানববন্ধন করেছে।

এতে বাগান পঞ্চায়েত কমিটি, ছাত্রযুব ও এলাকার সুশীল সমাজ অংশ নেয়।

মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশে বাগান পঞ্চায়েতর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন রিংকু দেব রাখু, চেয়ারম্যান, ৯ নং সাতগাঁও ইউনিয়ন পরিষদ চা শ্রমিকের মজুরী বৃদ্ধিতে একাত্মতা প্রকাশ করেন। জনিস পট নায়েক চা শ্রমিক ও ৯ নং সাতগাঁও ইউনিয়ন পরিষদ যুবলীগের সভাপতি বলেন আমি সর্বপ্রথম শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করি জাতির পিতা ও তার পরিবারের আত্মার মাগফেরাত কামনা করি। আমরা ২০০ বছর ধরে চা বাগানে বসবাস করে আসছি কিন্তু চা বাগানে মজুরী ১২০ টাকা রয়ে গেছে। দ্রব্যমূল্যের উর্দ্ধগতি ১ দিনের মজুরী ১ জনের খোড়াকি না হিসাব করে দেখা গেছে ১ জনের খাবার ৪৫০ টাকা লাগে। আমি মালিক পক্ষকে জানাচ্ছি আপনারা মজুরী বাড়ান না হয় আমরা বৃহত্তর আন্দোলনে যাব। আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মানবতার মা মাননীয় নেত্রী শেখ হাসিনা হস্তক্ষেপ ও সুদৃষ্টি কামনা করছি। দুলাল বোনার্জী বলেন আমরা চা শ্রমিক যখন পুজা উৎসবে শ্রীমঙ্গল শহরে যাই তখন ব্যবসায়ীরা জিজ্ঞেসা করে আপনারা ১২০ টাকা দিয়ে কিভাবে চলেন এটা আমাদের জন্য দুঃখজনক! আমি বলি আমরা চা শ্রমিক দু’ বেলা রুটি খাই একবেলা ভাত খাই। মালিকপক্ষ কোটি কোটি টাাকা ব্যবসা করে আর আমাদের মজুরীর জন্য মালিকপক্ষ ১৯ মাস ধরে তালবাহানা করছে। আমাদের চা শ্রমিক নেতৃবৃন্দ সাথে সাড়া দিয়ে বাংলাদেশের চা বাগানে চা শ্রমিকের মজুরী ৩০০ টাকা না দেওয়া পর্যন্ত আন্দেলন ও সংগ্রাম চালিয়ে যাব। আমাদের ৩০০ টাকা মজুরী দিতে হবে দিতে হবে।
বিকাশ দত্ত, ওয়ার্ড সদস্য বলেন ২০২০-২০২১বাস্তবায়ন লক্ষে চুক্তিতে আজকে আমরা মানববন্ধন করছি। প্রতিদিন কারেন্ট চলে যায় ৭-১০ বার ফলে কেরোসিন কিনতে চলে যায় ৬০-৭০ টাকা তাহলে ৬০ টাকা দিয়ে কিভাবে সংসার জীবনযাপন করবে। আমাদের এমপি স্যার উপাধ্যক্ষ ডঃ মোঃ আব্দুস শহীদ এমপি মহোদয় সংসদে বার বার চা শ্রমিকের মজুরী ৫০০ টাকা বলেছেন কিন্তু মালিক তা কোন তোয়াক্কা না করে নিরব ভুমিকা পালন করে চা শ্রমিকদের নির্যাতন শোষন বঞ্চিত করে যাচ্ছে। চা শ্রমিকের মজুরী ৩০০ টাকা না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন সংগ্রাম চালিয়ে যাবে।
সন্তোষ কর্মকার বলেন আজ ৫ম দিনে পূর্ণাঙ্গ কর্মবিরতি কর্মসুচী পালন করছি।দ্রব্যমূল্যের উর্দ্ধগতি বাড়ার কারণে আমরা দূর্বিষহ দিনাতিপাত কষ্টের জীবনযাপন করতেছি।আমাদের বাপ দাদারা দেশ স্বাধীন করেছে কিন্তু মালিক পক্ষ হতে আজও চা শ্রমিকরা শোষিত বঞ্চিত লাঞ্চিত হচ্ছে।যেখানে দ্রব্যমূল্য আকাশ ছোয়া সেখানে চা শ্রমিকে মজুরী ১২০ টাকা। বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ চা শিল্প অন্যতম।চা শিল্পের চা শ্রমিকের ঘামের টাকায় আপনারা অট্টালিকায় থাকেন কিন্তু চা শ্রমিকের প্রতি খেয়াল রাখেন না। মজুরী না বাড়া পর্যন্ত আন্দোলন সংগ্রাম চলবে। দুলাল দাস বলেন আমাদের চা শ্রমিক নেতৃবৃন্দ ১৯ মাস ধরে অনেক চেষ্টা চালিয়েছেন মজুরী বাড়ার জন্য কিন্তুক মালিক পক্ষ আমাদের ১৪,১৫,২০ টাকা দিবে বলে ১৯ মাস কাটিয়েছে তালবাহানা করে।
আগষ্ট মাস শোকের মাস চা শ্রমিকের মজুরী শেষ পর্যন্ত না বেড়ে শোকের মাসে চা শ্রমিকরা রাস্তায় নেমে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশে করছে।আমরা মজুরী না বাড়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাব। তিনি আরও বলেন চা শ্রমিক কুচক্রী মহল থেকে আপনারা সাবধান থাকবেন।

উক্ত মানববন্ধন সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন চিতমহন দাস বাগান পঞ্চায়েত সভাপতি,জনিস পট নায়েক চা শ্রমিক ও ৯ নং সাতগাঁও ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি, মিলন শীল সাবেক চেয়ারম্যান, বিকাশ দত্ত, ৬ নং ওর্য়াড বর্তমান মেম্বার, সাবেক মেম্বার অজিত বোনার্জী, সর্দার সন্তোষ কর্মকার, দুলাল বোনার্জী সাবেক পঞ্চায়েত সম্পাদক, অনিল বোনার্জী সাবেক বাগান পঞ্চায়েত সভাপতি, দীপালি কানু চা শ্রমিক,টুম্পা তাঁতী,সাবেক সম্পাদক ধ্রুব সবর,নয়ন তাঁতী,পুজা কমিটি সভাপতি সজল বোনার্জী ও সম্পাদক দুলাল দাস,দুলাল নায়েক,পরিমল দাস সাবেক সভাপতি পঞ্চায়েত কমিটি,দ্বীপ্ত গোস্বামী, সর্দার বিমল তাঁতী, লছমন কানু সাবেক ইউপি মেম্বার,বড় সর্দার দুলাল তাঁতী, টিলা সর্দার নিবারণ বোনার্জী এলাকার ছাত্রযুব সুশীল সমাজসহ প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন।

বক্তারা আরও বলেন বর্তমানে চা শ্রমিকরা সাপ্তাহিক পেমেন্ট/ তলফ পাওয়ার পর পুজা চাঁদা, কারেন্ট বিল,কিস্তি,মরা চাঁদা, প্রভিডেন্ট ফান্ড কাটার পর সামান্যতম কিছু টাকা পায় যা ২ দিনের পরিবার চালানোর খরচ হয় না। বাজারেও দ্রব্যমূল্য উর্ধগতি আকাশ ছোয়া হাতের নাগালের বাহিরে। তারপরও কিছু কিছু চা বাগানে মালিকপক্ষ কোম্পানি পার্মানেন্ট শ্রমিকদের ১২০ টাকা দৈনিক মজুরী ও নন পার্মানেন্ট শ্রমিক দৈনিক মজুরী ৮৫ টাকা দিয়ে আসতেছে।
তারপর আমরাইল ছড়া চা বাগান হতে হুগলীয়া,গান্ধীছড়া,সাতগাঁও চা বাগান সম্মিলিত হয়ে ঢাকা শ্রীমঙ্গল মেইন রাস্তা প্রদক্ষিণ করে আমরাইলছড়া চা বাগানে অবস্থান নেন।
মৌলভীবাজার, সিলেট বিভাগ সহ পুরো বাংলাদেশ জুড়ে চা শ্রমিক আন্দোলন সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category